জাজিরায় ভুট্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য,

লেখক:
প্রকাশ: মে ২৯, ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। তার মধ্যে পেয়াজ, রসুন,শরিসা,ধান সহ নানা ফসল রয়েছে তবে এই বছরের মধ্যে অন্যতম হলো ভুট্টা, যা সম্প্রতি এ অঞ্চলের একটি লাভ জনক পণ্য বলে পরিচিতি পেয়েছে। ভুট্টা চাষ বদলে দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা।

এক সময় চরে মানুষ না খেয়ে কষ্টে দিন পার করত। কিন্তু গত ১৫ বছরে চর এলাকায় দৃশ্যপট বদলে গেছে। বালু মাটি সহ সব মাটিতেই ভুট্টা চাষ করে বদলে গেছে তাদের জীবন। গ্রামগুলোতে খড়ের ঘরের পরিবর্তে উঠেছে আধাপাকা ঘর। এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না তাদের। এই বছর শরীয়তপুরের জাজিরায় ভুট্টা বলা যায় প্রধান অর্থকরী ফসল।
ভুট্টার দানা শিশু খাদ্য সহ মানুষের বিভিন্ন রকম খাদ্য চাহিদা মিটাতে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলা জুড়ে সবুজ পাতায় স্বপ্ন বুনছেন ভুট্টা চাষিরা। ইতোমধ্যে অনেকেই ভূট্টা চাষাবাদ করে ঘরে ফসল তুলে ফেলেছে।
কোথাও কোথাও ভূট্টা বেরিয়ে পেকে আসছে । কম সময়ে ও ভূগর্ভ স্তরের পানি কম ব্যবহার করতে ভূট্টা আবাদের জন্য কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠেছে একাধিক চর। সেই চরে গড়ে উঠেছে বসতি। চলছে নানা জাতের ফসলের চাষাবাদ। পদ্মার বুকে সবচেয়ে বেশি চর জেগেছে জাজিরা উপজেলায়। অন্যদিকে মেঘনার বুকে সবচেয়ে বেশি চর জেগে উঠেছে চাদপুরের কয়েকটা উপজেলায়।
এসব চরের বুকে মানুষের বসতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ শুরু হয়েছে। জাজিরার চরাঞ্চলে এ বছর আবহাওয়া
অনুকূল ও ভুট্টায় পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া আলুর জমিতে ভুট্টার আবাদ করলে খরচ একটু কম হয়।
ভুট্টার পর ওই জমিতে ধান ও পাট আবাদও হয়। প্রতি বিঘায় ভুট্টার ফলন ভালো হলে তাতে ৩৫-৪৫ মণ হয়ে থাকে। এছাড়া কমপক্ষে ৩০-৩৫ মণের মতো ফলন হয়। বাজারে নতুন ভুট্টার মণ ১০৫০-১৩০০ টাকা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর চর সহ জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়ন, বড় কান্দি ইউনিয়ন, পালেরচর ইউনিয়ন, বিলাসপুর ইউনিয়ন সহ অন্যান্য ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতি বছর ছয় মাস পর পর ভুট্টা চাষ শুরু হয়।
ভুট্টা চাষের শুরুতেই দাম বেড়ে যায় সার ও বীজের। এতে সাধারণ কৃষকরা স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুদ নিয়ে চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হলে ভালো, না হলে পথে বসতে হয় কৃষকদের। এদিকে কৃষি ব্যাংকগুলো ভুট্টা চাষের ওপর ঋণ দিলেও সেই ঋণ তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের। ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হলে স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে এলাকার বেকার যুবকদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করে সচেতন মহল। কৃষি বিভাগের পাশাপশি ভুট্টা চাষিদের স্বাবলম্বী ও বাজার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও।
চলতি মৌসুমেও এ অঞ্চলের কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ২০২২ সালের চেয়ে প্রায় দশ গুন পরিমাণ জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেন এখানকার কৃষকরা। বিশেষভাবে শরিয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া, ভেদেরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেন চাষীরা। জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে ৭০ হেক্টর চাষাবাদ আসা ছিলো কিন্তু এই বছর তুলনামূলক জমিতে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে।
চলতি অর্থবছর ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ আরও প্রায় দশ গুলা বেড়েছে। প্রতি বছর অন্যান্য ফসল চাষ ছেড়ে দিয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এই বছর ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হেক্টর। কিন্তু দশ গুন বাড়ায় এই বছড় ৭৫০ হেক্টর হয়েছে। গত মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে প্রায় দশ গুন বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়।
সরেজমিনে জাজিরা উপজেলার গফুর মোল্লার কান্দি এলাকায় কৃষক শরিফ সরদার জানান, আমার দেখা দীর্ঘ কয়েক বছর তুলনায় এই বছর আমাদের ভুট্টার ফলন বেড়েছে, কৃষি বিভাগের সহায়তায় উন্নতজাতের বীজ আবাদের ফলে আগের চেয়ে ভুট্টার ফলন এখন দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি একর জমি থেকে প্রায় ১১০-১২০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায় এবং এর জন্য খরচ পড়ে ২৫-৩৫ হাজার টাকা। একরপ্রতি খরচ বাদে লাভ থাকে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
ছাড়ি মাহমুদ শিকদার কান্দির এলাকার শাহজাহান মৃধার ছেলে উজ্জ্বল জানান, এ এলাকায় মানুষের অনেক কষ্ট ছিল। দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে তাদের চলতে হতো। এখন জমিতে সব রকম ফসল ও ভুট্টার চাষ শুরু হলে এখানকার মানুষের দিন পরিবর্তন হতে শুরু করে। এবছর ভুট্টা চাষের পর থেকে আমরা অনেকই লাভবান হয়েছি ।
কাজির হাট বাজারের ভুট্টা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের ভুট্টার অধিক ফলন, দামও বেশি। প্রতি মণ ভুট্টা ১০৫০ থেকে ১৩০০ টাকা করেও বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ এলাকার ভুট্টা কিনতে ঢাকা, ফরিদপুর , যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসেন। তাই কৃষকরা ভুট্টার দামও পান। জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন জানান, ভুট্টা চাষের সময় কৃষকদের জমিতে ব্যাপকভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
আমরা এই বছর ভুট্টা চাষীদের মধ্যে ২৩০ জন চাষীকে সার ও সহায়তা দিয়েছি । চলতি মৌসুমে ভুট্টার সার ও সহায়তা পাওয়াতে ভুট্টা চাষিদের খরচ তুলনা মূলক কম হওয়ায় জাজিরার চরাঞ্চলসহ জেলাজুড়ে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

About The Author