ভুট্টা চাষের শুরুতেই দাম বেড়ে যায় সার ও বীজের। এতে সাধারণ কৃষকরা স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুদ নিয়ে চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হলে ভালো, না হলে পথে বসতে হয় কৃষকদের। এদিকে কৃষি ব্যাংকগুলো ভুট্টা চাষের ওপর ঋণ দিলেও সেই ঋণ তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের। ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হলে স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে এলাকার বেকার যুবকদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করে সচেতন মহল। কৃষি বিভাগের পাশাপশি ভুট্টা চাষিদের স্বাবলম্বী ও বাজার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও।
চলতি মৌসুমেও এ অঞ্চলের কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ২০২২ সালের চেয়ে প্রায় দশ গুন পরিমাণ জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেন এখানকার কৃষকরা। বিশেষভাবে শরিয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া, ভেদেরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেন চাষীরা। জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে ৭০ হেক্টর চাষাবাদ আসা ছিলো কিন্তু এই বছর তুলনামূলক জমিতে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে।
চলতি অর্থবছর ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ আরও প্রায় দশ গুলা বেড়েছে। প্রতি বছর অন্যান্য ফসল চাষ ছেড়ে দিয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এই বছর ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হেক্টর। কিন্তু দশ গুন বাড়ায় এই বছড় ৭৫০ হেক্টর হয়েছে। গত মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে প্রায় দশ গুন বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়।
সরেজমিনে জাজিরা উপজেলার গফুর মোল্লার কান্দি এলাকায় কৃষক শরিফ সরদার জানান, আমার দেখা দীর্ঘ কয়েক বছর তুলনায় এই বছর আমাদের ভুট্টার ফলন বেড়েছে, কৃষি বিভাগের সহায়তায় উন্নতজাতের বীজ আবাদের ফলে আগের চেয়ে ভুট্টার ফলন এখন দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি একর জমি থেকে প্রায় ১১০-১২০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায় এবং এর জন্য খরচ পড়ে ২৫-৩৫ হাজার টাকা। একরপ্রতি খরচ বাদে লাভ থাকে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
ছাড়ি মাহমুদ শিকদার কান্দির এলাকার শাহজাহান মৃধার ছেলে উজ্জ্বল জানান, এ এলাকায় মানুষের অনেক কষ্ট ছিল। দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে তাদের চলতে হতো। এখন জমিতে সব রকম ফসল ও ভুট্টার চাষ শুরু হলে এখানকার মানুষের দিন পরিবর্তন হতে শুরু করে। এবছর ভুট্টা চাষের পর থেকে আমরা অনেকই লাভবান হয়েছি ।
কাজির হাট বাজারের ভুট্টা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের ভুট্টার অধিক ফলন, দামও বেশি। প্রতি মণ ভুট্টা ১০৫০ থেকে ১৩০০ টাকা করেও বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ এলাকার ভুট্টা কিনতে ঢাকা, ফরিদপুর , যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসেন। তাই কৃষকরা ভুট্টার দামও পান। জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন জানান, ভুট্টা চাষের সময় কৃষকদের জমিতে ব্যাপকভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
আমরা এই বছর ভুট্টা চাষীদের মধ্যে ২৩০ জন চাষীকে সার ও সহায়তা দিয়েছি । চলতি মৌসুমে ভুট্টার সার ও সহায়তা পাওয়াতে ভুট্টা চাষিদের খরচ তুলনা মূলক কম হওয়ায় জাজিরার চরাঞ্চলসহ জেলাজুড়ে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।