শরীয়পুরের জাজিরা উপজেলায় ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন
উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাইলাতুল হোসেনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৫ বছর ) বয়সী এক শিক্ষার্থী।
এ ঘটানায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বর ও কনের বাবাকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাইলাতুল হোসেন।
বুধবার (৫ জুলাই) দুপুর ২ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পালেরচর ইউনিয়নের সাদেক মুন্সির কান্দি এলাকায় কনের বাবার বাড়িতে গিয়ে এ বিবাহ বন্ধ করার পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উভয় পরিবারের অভিভাবককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করা হয়।
জানা গেছে, পালেরচর ইউনিয়নের ছাদেক মুন্সির গ্রামের ফরহাদ ফকিরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৯ম শ্রেনীর মেয়েকে পার্শবর্তী গ্রামের সিরাজ শেখের ছেলে ব্যবসায়ী সোবহান শেখের সাথে বিয়ের আয়োজন চলছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাইলাতুল হোসেন কনের বাবার বাড়িতে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
পরে কনের পরিবার ও ছেলের পরিবার থেকে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ দিবেন না। মর্মে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয় ।
অল্প বয়সে বেশিরভাগ মাতৃমৃত্যু প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর মূল কারণ কিশোরী বয়সীদের মা হওয়া। কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাল্যবিবাহের কারণে মাতৃমৃত্যু কিংবা শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি হয়ে থাকে। অনেকক্ষেত্রে নাবালিকা মেয়ে মা হওয়ায় কিভাবে শিশুকে পরিচর্যা করবে সে সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান থাকে না। এর ফলে মা ও শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
বাল্যবিবাহের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুও ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, নারীশিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বিরোধী পদক্ষেপের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মা ও শিশুর মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) লাইলাতুল হোসেন বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন সব সময় মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর রাখছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত। আমরা সঠিক সময়ে গিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। জননিরাপত্তা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের এ ধরণের কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।বাল্যবিবাহ দেওয়া যাবে না এ মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।