শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এখনো।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জাজিরা সময়কে বলেন, আমরা আসামি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, গত ২১ মে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন সকাল ১১টার দিকে জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ভিডিও ধারণ করেন আশিকুর রহমান হৃদয়সহ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাচ পরিহিত এক ব্যক্তি তাদের প্রথমে বাঁধা দেন। তাদের মারধর করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এমন তথ্য পেয়ে জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. পলাশ খানসহ প্রেস ক্লাবের ১০ জন সদস্য সেখানে তথ্য সংগ্রহে যায়। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর সমর্থকরা তাদের ওপর চড়াও হয়।
একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা অন্য সাংবাদিকরা তাদের ছাড়াতে গেলে অন্তত ৩০-৪০ জন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক তাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়। এর মধ্যে প্রেস ক্লাবের সভাপতি পলাশ খানসহ ৫ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়। এ সময় হামলার শিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, ক্যামেরাসহ তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়ে যায় ও ভেঙে ফেলে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ২২ মে জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি পলাশ খান বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে আসামি করা হয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইদ্রিস ফরাজীর বোন জামাই ওহাব ফকির ও তার সমর্থক বিপ্লব আকনসহ হামলাকারী অন্যান্য সমর্থকদের।
মামলার আসামিরা হলো ওহাব ফকির (৪০), বিপ্লব আকন (৩৫), হামজা হাওলাদার (৫৫), বাচ্চু ফকির (৩৭), আবু তালেব (২৬), ফরিদ হোসেন মিলন (২৮), আমজাদ হাওলাদার (৩৫), রহমান হাওলাদার (৫০), বাচ্চু হাওলাদার (৪২), শাকিল হাওলাদার (৩০), মনির হাওলাদার (৪২), তানভির সোহাগ (২৭), রহমান হোসেন হাওলাদার (৪০), সবুজ হাওলাদার (৩৫)। আসামিরা উপজেলার সেনেরচর আফাজ উদ্দিন মুন্সী কান্দি এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাওন মিয়া কালবেলাকে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনায় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ একটি আসামিও ধরতে পারল না। এতে আমরা সাংবাদিকরা খুবই হতাশ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. পলাশ খান জাজিরা সময়কে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আমিসহ ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়। এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকদের পক্ষে আমি বাদী হয়ে জাজিরা থানায় গত ২২ মে একটি মামলা দায়ের করলেও সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।