পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক ও মনোহর মোড় থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের জন্য অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে ডেকে নিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ওই অফিসের দুই কর্মচারীসহ স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন ভূক্তভোগী সাংবাদিক।
মঙ্গলবার -৩০ জুলাই- শরীয়তপুরের পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সাধারণ ডায়েরীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভূক্তভোগী সাংবাদিক ও সাধারণ ডায়েরী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা থেকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসে সড়ক ও মনোহর মোড় থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই প্রান্তের অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পহেলা জুলাই তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন বাংলাদেশ সমাচারের প্রতিনিধি রুহুল আমিন জুয়েল রানা নামে এক সাংবাদিক।
এরপর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দীর্ঘদিন তথ্য প্রদানে সময়ক্ষেপণ করেন । সর্বশেষ গত সোমবার -২৯ জুলাই- দুপুরে নির্বাহী প্রকৌশলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্য নেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগের অফিস সহায়ক গোলাম মাওলার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা অনুযায়ী সড়ক বিভাগে যান তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল রানাসহ তার আরেক সহকর্মী ঢাকা পোস্টের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ।
এসময় জুয়েল রানা ও সাইফ রুদাদ অফিস সহায়ক গোলাম মাওলাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জুয়েল রানাকে নিয়ে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে গিয়ে তাকে অন্য একটি স্থানে জোরপূর্বক বসিয়ে রাখেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সড়ক বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার- অফিস সহায়ক গোলাম মাওলাসহ স্থানীয় ঠিকাদার সরোয়ার তালুকদার- রাব্বিসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন অফিস সহায়কের কক্ষে প্রবেশ করে সাইফ রুদাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তথ্য না দিয়ে লাঞ্ছিত করে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
এসময় তারা আবার সাইফ রুদাদকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে পুনঃরায় তথ্য চাইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। এরপর সোমবার রাতে সাইফ রুদাদ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করে লাঞ্ছনার শিকার সাংবাদিক জুয়েল রানা বলেন, অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দিবেন বলে আমাকে অন্য একটি রুমের সামনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক বসিয়ে রাখে। এরপর গোলাম মাওলা, সালমা, সরোয়ার, রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত অফিস সহায়কের কক্ষে ডুকে সাইফ রুদাদকে লাঞ্ছিত করে আমাদের দুইজনকেই প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে সড়ক বিভাগের অফিস থেকে বের করে দেয়।
সড়ক বিভাগের সিসি ক্যামেরা চেক করলে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এঘটনায় আমার সহকর্মী সাইফ রুদাদ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
লাঞ্ছনার শিকার আরেক সাংবাদিক সাইফ রুদাদ বলেন, সহকর্মী জুয়েল রানার অনুরোধে সড়ক বিভাগে গিয়েছিলাম। অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দিবেন বলে জুয়েল রানাকে অন্যত্র ডেকে নিয়ে যায়। এসময় আমি অফিস সহায়কের কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা- কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার- ঠিকাদার সরোয়ার, রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
আমি বারবার বলার চেষ্টা করছিলাম, আমি জুয়েল রানা নই, কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শোনেনি। আমি এঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমার সহকর্মী জুয়েল রানাসহ আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অফিস সহকারী গোলাম মাওলা ও কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেননি।
অভিযুক্ত ঠিকাদার সরোয়ার তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন- সাংবাদিকরা সড়ক অফিসে গিয়েছিল তখন আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমার সাথে তাদের কোন বাকবিতণ্ডা হয়নি। কিন্তু পরে জানতে পারলাম আমার নামে থানায় জিডি করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। পরে আমি ঘটনাটি জেনেছি। সরোয়ার নামে যে ঠিকাদার সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেছে তাকে আমাদের সড়ক বিভাগ থেকে বহিস্কার করেছি। তিনি আর আমাদের অফিসে ঢুকতে পারবেন না।
আর রাব্বি নামে কাউকে আমি চিনিনা। তবে আমাদের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারকে সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে যদি অফিসে এধরণের কোন ঘটনা ঘটে তবে তাকে বদলীর জন্য সুপারিশ করা হবে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক সাংবাদিক জীবনানাশের হুমকির বিষয় উল্লেখ্য করে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে।