কমিউটার ট্রেন ও দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট পেতে কাউন্টারে দীর্ঘ সারি

লেখক:
প্রকাশ: এপ্রিল ১৯, ২০২৩

ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে আজ বুধবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিক্রির কাউন্টারের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

অন্যদিকে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলোর সামনেও মানুষের ভিড় দেখা যায়। ট্রেনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণের টিকিট (স্ট্যান্ডিং টিকিট) কিনতেই তাঁরা কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় করেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিক্রির কাউন্টারের সামনে অন্তত কয়েক শ মানুষকে সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তখন টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ ছিল।

দীর্ঘক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে কমিউটার ট্রেনের টিকিট কিনতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ পরপর নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কি করছিলেন। আবার তাঁরা মাঝেমধ্যে একসঙ্গে জোরে আওয়াজ দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছিলেন।

আন্তনগর ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এ বছরের ঈদযাত্রায় আন্তনগর ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে অগ্রিম বিক্রি করা হয়। তবে আন্তনগর ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট স্টেশন থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণত ট্রেন ছাড়ার আগে এ ধরনের টিকিট বিক্রি করা হয়।

টিকিট কিনতে পুরুষের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন নেত্রকোনার সালাম মিয়া। তিনি রাজধানীর গুলিস্তানের একটি দোকানের মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সালাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রথমে স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু টিকিট পাননি। এরপর তিনি কমিউটার ট্রেনের টিকিট কিনতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

মহুয়া কমিউটার ট্রেনের টিকিট কিনতে আগ্রহী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মোহনগঞ্জের একটি টিকিট পেয়েছেন তিনি। অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে মোট আটটি কমিউটার (বেসরকারি ট্রেন) নিয়মিত ছয়টি গন্তব্যে চলাচল করে। এগুলো হলো—বলাকা কমিউটার (ঝরিয়া), দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার (দেওয়ানগঞ্জ), মহুয়া কমিউটার (মোহনগঞ্জ), কর্ণফুলী কমিউটার (চট্টগ্রাম), রাজশাহী কমিউটার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), জামালপুর কমিউটার (দেওয়ানগঞ্জ) ও দুটি তিতাস কমিউটার (আখাউড়া)। এসব ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর পর টিকিট বিক্রি করা হয়।

দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট কিনতে আন্তনগর ট্রেনের কাউন্টারগুলোর সামনের সারিতে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, তাঁরা অনলাইনে বসে যাওয়ার টিকিট কিনতে পারেননি। তাই এখন দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্যই টিকিট কিনতে চান।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, আন্তনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তাই দ্রুত টিকিটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে টিকিট না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন।

আন্তনগর ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা জামালপুরের আলতাফ আলী বলেন, সকাল আটটার মধ্যেই তিনি কমলাপুরে চলে আসেন। তখনই অনেক মানুষ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি টিকিট পাবেন কি না, তা জানেন না।

আরেক যাত্রী ওয়ালদুল হাসান বলেন, ‘নেত্রকোনা যাব। আমার সামনে লাইনে ২০ থেকে ২৫ জনের মতো মানুষ ছিল। আমি যখন কাউন্টারের সামনে গেলাম, তখন আমাকে জানাল, টিকিট শেষ। এখন বাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

স্ট্যান্ডিং টিকিট প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটি ট্রেনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে পারি। আমি দেখলাম, কাউন্টারের সামনে হাজারো মানুষের ভিড়। আমরা তো সবাইকে স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে পারব না।’